দেশে নির্বাচনের অবস্থা সবাই জানি। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও বিস্তর কথা চলছে। এর মধ্যে ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সংস্কারের জন্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। তবে তার দিক থেকে এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনই সন্তোষজনক ছিল না। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি দিনে দিনে কমছে। হানাহানি বাড়ছে, বিরোধীদের প্রতি পুলিশি ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
অনেক দিন ধরে এক নির্বাচন কমিশনার তাদের কমিশনের কাজ নিয়ে গণমাধ্যমে এমন কিছু কথা বলছিলেন- যাতে সংস্থাটির নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। অবশেষে জাতীয় ভোটার দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে ওই কমিশনারের মতবিরোধ প্রকাশ্যই হয়ে পড়েছে। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদের ব্যক্তিরা এভাবে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়লে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি অবশ্যই ক্ষুণ্ন হয়। আমরা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। অভিজ্ঞ মহলের প্রত্যাশা রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন এবং নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ফেরানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।
দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু আছে। শেখ হাসিনার সরকার এ পর্যন্ত দেশ ও জাতির কল্যাণে যেভাবে কাজ করে চলেছে, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। ফলে সচেতন মানুষমাত্রই তাকে আরও কিছুদিন ক্ষমতায় দেখতে চায়। সেদিক থেকে ক্রমেই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাটিকে পোক্ত করা জরুরি। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল মাঠে নিরঙ্কুশ আধিপত্য ভোগ করার কারণে দলের নিচের পর্যায়ে বহু উপদলীয় বিভাজন হয়েছে- যারা বিভিন্নভাবে অর্থবিত্ত অর্জনে নেমে পড়েছে। তাদের দৌরাত্ম্যে যেমন জনজীবনে ভোগান্তি বেড়েছে, তেমনি সচেতন মানুষসহ সর্বমহলে ক্ষোভেরও জন্ম হয়েছে। এ অবস্থা বজায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়লাভ নিশ্চিত করা মুশকিল। সম্ভবত এ কারণেই সরকার নির্বাচন কমিশনের বর্তমান ভূমিকা নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না।
দেশের উন্নয়ন, করোনা মোকাবিলা, দরিদ্রবান্ধব কার্যক্রম, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ ভর্তি, টিকা কর্মসূচির সাফল্য মিলিয়ে দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশ উজ্জ্বল। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ অন্যান্য সূচক আশাব্যঞ্জক। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দানও দেশের গৌরব বাড়িয়েছে। কেবল নির্বাচনব্যবস্থা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা ওই ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করছে।
আমরা মনে করি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সত্যিকারের রাষ্ট্রনায়কের মতোই দেশ পরিচালনা করছেন। ফলে তার কাছ থেকে অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো রাজনৈতিক অঙ্গনেও আমরা বলিষ্ঠ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি। আইনের শাসন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতেও তাকে এগিয়ে থাকতে হবে। এটি জাতি ও আন্তর্জাতিক মহলের প্রত্যাশা তার কাছে। নির্বাচন কমিশনের বর্তমান হাল অবস্থায় আর দেরি করা উচিত হবে না বলেই আমরা মনে করি।
স্বপ্নচাষ/একে
বাংলাদেশ সময়: ২:০০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১
swapnochash24.com | swapno chash