শরীয়তপুর সদর উপজেলার বাছারকান্দি গ্রামের আলী হোসেন মোল্লা (৮৫) এসেছেন বয়স্ক ভাতার টাকা তুলতে। ব্যাংকের সামনে চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারেননি।ক্লান্ত আলী হোসেন দীর্ঘ সময় রোদে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ বোধ করছিলেন। কখন দাড়িয়ে, কখনো বসে, কখনো লাইনের পাশে একটি দোকানের সিড়িতে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।
তাঁর মতো কয়েক শ মানুষ রোববার বয়স্ক ভাতার টাকা তুলতে এসে এভাবেই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সড়কে অপেক্ষা করেছেন। করোনার সংক্রমনের ঝুঁকি থাকলেও অপেক্ষা করার সময় কাউকেই সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি। অনেকেই মুখে মাস্ক পরেননি।
আলী হোসেন মোল্লা বলেন,’ বাড়ি থেকে জেলা সদরের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। এ ১৫ কিলোমিটার কি আমার পক্ষে একা আসা সম্ভব। তাই নাতিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। ব্যাংক টাকা দিচ্ছে দেরিতে, রোদে দাঁড়িয়ে থেকে আমিও অস্থির হয়ে যাচ্ছ। নাতিটাও রোদে কষ্ট করছে।’
শরীয়তপুর জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরে ছয়টি উপজেলা ও সদর পৌরসভার মধ্যে ৪৩ হাজার ৬১৭ ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতা দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেককে মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। বছরে চারটি কিস্তিতে ওই টাকা পায় তালিকাভূক্ত বয়স্করা। জেলার সোনালী, জনতা, অগ্রনী ও কৃষি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে বয়স্কদের ওই টাকা তোলার সুযোগ রয়েছে। সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়ের সমাজ সেবা অদিদপ্তর ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে উপকারভোগীদেন তালিকা দেয়। তখন ব্যাংক থেকে টাকা দেয়া শুরু করা হয়। রোববার বছরের জানুয়ারি-মার্চের কিস্তির টাকা বিতরণ করা হচ্ছিল জেলা শহরের সোনালী ও জানতাব্যাংক থেকে। ওই দুটি ব্যাংকের সামনেই কয়েক শ মানুষ ভির করেন।
সদর উপজেলার মৌলবিকান্দি গ্রামের আব্দুল রহমান (৭৫) বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বয়স্কদের এমনিতেই ঘরের বাহিরে আসা উচিত নয়। আমরা গরিব মানুষ এই মুহুর্তে টাকার প্রয়োজন। তাই ঝুকি নিয়েই গ্রাম থেকে টাকা নিতে এসেছি। কিন্তু চার ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো ব্যাংকে ঢুকতে পারছি না। এসময় অন্তত ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টাকাটা বিতরণ করতে পারত।’
সদরের পালং ইউনিয়নের পূর্বকোটাপারা গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন (৭০) বলেন, ‘দেশ অনেক এগিয়েছে। এখনতো আমাদের টাকা মোবাইলেই পাঠাতে পারে। করোনার মধ্যে বাড়ি থেকে বের হতে চেয়েছিলাম না। কিন্তু টাকার প্রয়োজন থাকায় ঝুঁকি নিয়ে এসেছি, ভিরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি।’
জনতা ব্যাংকের শরীয়তপুর শহর শাখার ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ শাখায় দেড় হাজার ব্যক্তির বয়স্ক ভাতার হিসাব নম্বর রয়েছে। রোববার তিন শতাধিক মানুষ এক সঙ্গে চলে আসায় কিছুটা ঝামেলায় হয়েছিল। করোনার কারণে অনেক মানুষ এক সঙ্গে ব্যাংকে ঢোকার সুযোগ ছিল না। তাই তাদের বাইরেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জানুয়ারী-মার্চের বয়স্ক ভাতা দেওয়ার কাজ চলছে। পাশাপাশি ঈদ ও করোনার কারনে এপ্রিল-জুনের কিস্তিও ব্যাংক থেকে দেওয়া হয়েছে। উপকারভোগীরা দুটি কিস্তির টাকা একসঙ্গে তুলতে পারবেন। আর এক সঙ্গে অনেক মানুষ ভির করায় ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা বিপাকে পড়েছেন। মুঠোফোনের মাধ্যমে কীভাবে টাকা দেওয়া যায় তা সরকারের ভাবনায় আছে।
স্বপ্নচাষ/আরএস
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১১ মে ২০২০
swapnochash24.com | swapno chash