ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে কাত হয়ে পড়ে আছে ট্রাক। এতে পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ। ছবি: সংগৃহীত
বৃষ্টি আর ঢলের পানিতে আসা বন্যায় হঠাৎ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল একটার পর একটা জনপদ। পানিবন্দী হয়ে পড়ে গ্রামের পর গ্রাম। প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে থাকা মানুষ একপর্যায়ে খাওয়ার কষ্টেও পড়ে। জ্বালানি থেকে শুকনো খাবার—সবকিছুর দামই বেড়ে যায়। এখন পানি একটু একটু কমে যোগাযোগব্যবস্থা সচল হলেও বাজার আর ঠিক হচ্ছে না। সবকিছুর দাম সেই আগের মতোই বাড়তি। বানের পানিতে সবকিছু হারানো মানুষগুলোর টিকে থাকার লড়াই এতে আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের শতভাগ এলাকা পানির নিচে চলে গিয়েছিল। বন্ধ হয়ে যায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কসহ জেলা সদরের সঙ্গে সব উপজেলার যোগাযোগ। এখনো যোগাযোগ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তবে পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে।
কিন্তু বাজারে গ্যাস সিলিন্ডার, চিড়া-মুড়ি, চাল-ডাল, পানি, মোমবাতিসহ অনেক পণ্যের দাম যে সেই বেড়ে গিয়েছিল, তা আর কমছেই না। জেলা সদর ও কয়েকটি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। অনেক জায়গায় ১ হাজার ২৫০ টাকার গ্যাস সিলিন্ডার দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা, ২০ টাকা মূল্যের আলু ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, ডাল ১২০ থেকে ১৫০, চিড়া ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় পণ্যসামগ্রী আনতে বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। ফলে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলার বাসিন্দা জয়নাল মিয়া বলেন, ‘পুরো নারিকেলতলা গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। এর মধ্যে সাড়ে বারো শ টাকার গ্যাস সিলিন্ডার আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া, প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।’
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাধন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আমিন উদ্দিন বলেন, ‘যে মোমবাতির দাম ৫ টাকা, সেটা ২০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তা-ও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্যোগের সময় মানুষ মানুষের পাশে থাকার কথা। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সময়টাতে আমাদের জিম্মি করে যা মনে চায় তা-ই করছেন।’
শুধু মোমবাতি নয়, চিড়া, মুড়ি ও নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। যদিও বাজারের দোকানের ভেতর পানি উঠে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা দোকান এখনো পুরোপুরি খুলতে পারছেন না।
উকিলপাড়ার বাসিন্দা রুবেল আহমদ বলেন, ‘দোকানিরা যেভাবে জিনিসপত্রের দাম রাখছেন, এই কাজটা তাঁরা মোটেও ঠিক করছেন না। প্রশাসন যদি এই সময়ে মাঠে থাকত, তাহলে আমরা অন্তত রক্ষা পেতাম।’
এ দুর্যোগের সময় যাঁরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন। গত মঙ্গলবার রাতে জেলা সার্কিট হাউসে বন্যাসংক্রান্ত বিষয়ে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বপ্নচাষ/ জেএআর
বাংলাদেশ সময়: ১০:২২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২
swapnochash24.com | swapno chash