সংগৃহীত ছবি
গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নওগাঁর কৃষকরা। কেটে রাখা ধানে পানি জমে আছে, আবার বেশি সময় ধরে পানি জমে থাকায় ধান থেকে বের হয়েছে চারা। সেইসঙ্গে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের শ্রমিক সংকট
দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, জেলার কিছু কিছু এলাকায় অতি বৃষ্টিতে ধান গাছ নুয়ে পড়েছে, আবার কোথাও ভেসে গেছে, ঝড়ের আঘাতে ঝরে গেছে ধান, কোথাও ভারী বৃষ্টিতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে পাকা ধান। আবার কোথাও জমিতে বেশি পানি থাকায় শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি। সেখানে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৯০ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর এবং উন্নত ফলনশীল উফশী জাতের রয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৯০ হেক্টর।
চাল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৩৭ মেট্রিক টন হিসেবে ছিল ৮ লাখ ১১ হাজার ৯৪৬ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার ৭১ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন চাল।
জেলায় চলতি মৌসুমে হাইব্রিড জাতের হিরা-২, হিরা-৬, এসএল-৮ এইচ, ব্র্যাক হাইব্রিড, তেজ, সিনজেন্টা ১২০৩, চমক, এমএস-১সহ প্রায় ২৬ জাতের ধান আবাদ হয়েছে। উফশী জাতের মধ্যে অন্যতম ব্রিধান-২৮, ব্রিধান-২৯, ব্রিধান-৮১, ব্রিধান-৮৯, জিরাশাইল, খাটো-১০, কাটারিভোগ, শম্পা কাটারিসহ প্রায় ২৭ জাতের ধান।
এদিকে নওগাঁ সদরে ১৭ হাজার ৬০০ হেক্টর, রানীনগরে ১৮ হাজার ৮০০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১৮ হাজার ৬০০ হেক্টর, বদলগাছীতে ১১ হাজার ৭৫০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ২৮ হাজার ৪২০ হেক্টর, পত্নীতলায় ১৯ হজার ৬০০ হেক্টর, ধামইরহাটে ১৮ হাজার ৩২০ হেক্টর, সাপাহারে ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর, পোরশায় ৮ সহাজার ২০০ হেক্টর, মান্দায় ১৯ হাজার ৮০০ হেক্টর এবং নিয়ামতপুরে ২২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে।
এদিকে ফলন ভালো হলেও গত কদিনের বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় অধিকাংশ জমির ধান মাটিতে পড়ে গেছে। আর ভারী বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়ায় অনেক জমির ফসলই হাবুডুবু খাচ্ছে। মাটিতে পড়ে থাকা এসব ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যেতে ভোগান্তির সঙ্গে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ি গ্রামের কৃষক মনতেজ জানান, এবার বোরো ধানের আবাদ খুব ভালো হয়েছিল। ঈদের আগে দুই দফা কালবৈশাখী ঝড়ে বিলের বেশির ভাগ ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। পরে ঈদের দিন ভোর থেকে শুরু করে গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গেছে। জমি থেকে পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আর জমিতে পানি থাকায় শ্রমিকরা ধান কাটতে মাঠে নামতে পারছে না। বেশি টাকা দিয়েও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক।
দুবলহাটি গ্রামের কৃষক সাজ্জাদ হোসেন জানান, জমিতে পানি জমে থাকায় ধানগাছগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যার কারণে ধানের রং নষ্ট ও ধানে চিটার পরিমাণ বৃদ্ধি পাতে পারে। দেখা যাক শেষমেশ কতটা ধান জমি থেকে পাওয়া যায়।
জেলার সদর উপজেলা, আত্রাই, রানীনগর, মান্দা, বদলগাছীর বোরো চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর তিন মাস মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তারা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছে। আর এই কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তোলার আগেই বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে পাকা ধান। এতে ধানের সঙ্গে ডুবেছে এই জেলার কৃষকের স্বপ্নও। জমিতে কেটে রাখা ধানের আঁটিতে পানি বাঁধার কারণে চারা গজিয়েছে। ধার-দেনা করে লাগানো ফসল এভাবে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের।
জেলার পোরশা উপজেলা থেকে আসা শ্রমিক রফিকুল ইসলাম, দেলোয়ার, মোস্তাকিনসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমরা বিঘা চুক্তি ধান কাটছি। জমির দূরত্ব অনুযায়ী দাম নেওয়া হচ্ছে সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা। বেশিরভাগ জমির ধান নুয়ে পড়েছে। নুয়ে পড়া ধান আমরা ৮ জনে দুই বিঘা পর্যন্ত কাটতে পারছি। আর সোজা হয়ে থাকা ধানগাছ তিন থেকে সাড়ে তিন বিঘা পর্যন্ত কাটা সম্ভব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বলেন, বিলের ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা ধান কাটতে পারছে না। ঈদের পর থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি হওয়ায় অনেক জমিতে পানি জমেছে। এই বৃষ্টিতে পাকা ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। তবে নুয়ে পড়া ধান বেশি দিন পানিতে থাকলে ধানে ট্যাক গজাতে পারে। সেক্ষেত্রে কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। এখন যদি শ্রমিক সংকট কাটিয়ে কৃষকরা ধান কেটে ঘরে তোলেন তাহলে ক্ষতি হবে না।
স্বপ্নচাষ/ জেএআর
বাংলাদেশ সময়: ১:৩৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৯ মে ২০২২
swapnochash24.com | swapno chash