নারীরা এখন আর শুধু অন্তঃপুরের বাসিন্দা নয়। পুরুষের পাশাপাশি নারীশক্তিও এগিয়ে চলেছে সমান তালে। জল, স্থল ও আকাশ—সর্বত্রই রয়েছে নারীদের অবাধ বিচরণ। এর পরও অনেক ক্ষেত্রেই রয়ে গেছে নারীর প্রতি বৈষম্য, রয়েছে পক্ষপাত।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার আবারও বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারিত ছিল—‘টেকসই আগামীর জন্য জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’। নারীর সমতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এবারের এই প্রতিপাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আর এ ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অনেক চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীরা স্বচ্ছন্দে এগিয়ে যাচ্ছে। উদ্যোক্তা হিসেবেও নারীরা খুব একটা পিছিয়ে নেই। এ কথা অনস্বীকার্য যে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন অনেক দূর এগিয়ে এসেছে এবং দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এর পরও স্বীকার করতে হবে যে আমাদের সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্য এখনো যথেষ্ট পরিমাণে রয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, সমাজে অনেক ক্ষেত্রেই নারীকে আজও অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়। নিরাপত্তাহীনতা এখনো নারীর এগিয়ে চলার পথে বড় বাধা।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পথে-ঘাটে চলাচলে বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারী নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হয়। ঘরে-বাইরে নারীকে শারীরিক, মানসিক নানামুখী নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নারীর প্রতি এমন অবমাননাকর আচরণ বন্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।
শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক অনেক সূচকেও প্রতিবেশী অনেক দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এগিয়ে এসেছে। শিক্ষায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি এবং উচ্চশিক্ষায় নারীদের উপস্থিতি এখন অনেক বেশি। শত বাধা অতিক্রম করে নারীরা এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। বাংলাদেশের একজন নারী আন্তর্জাতিক দাবায় গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাব পেয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনেও নারীরা ধারাবাহিক সাফল্য বয়ে আনছেন। এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন বাংলাদেশের নারী। দেশের সরকারপ্রধান একজন নারী। জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধী দলের নেতাসহ রাজনীতিতেও নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর পরও নারীরা অনেক বৈষম্যের শিকার। এমন অনেক পরিবার আছে, যেখানে নারীরা উপেক্ষিত। নারীর শিক্ষা গ্রহণ এবং জীবন গড়ার সংগ্রামকে বাধা দেওয়া হয়। কর্মক্ষেত্রেও অনেক নারী বেতন বৈষম্য থেকে শুরু করে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হন। পরিবারে নারীর ভূমিকা কিংবা সন্তান পালনসহ গৃহস্থালি কাজকর্মে নারীর অবদানকে অর্থনৈতিক কর্ম হিসেবে স্বীকার করা হয় না। অধিকার ও স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রেও পক্ষপাতের শিকার হন নারীরা। আর এসব কারণেই এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্যটি বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে।
সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রকে আরো বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা নিশ্চিত করতে পুরুষকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নারীদের আরো বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশ সিডও সনদ অনুমোদনকারী একটি রাষ্ট্র। এখানে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, রীতিনীতি, প্রথা ও চর্চা নিষিদ্ধ করতে হবে।
স্বপ্নচাষ/একে
বাংলাদেশ সময়: ৮:০২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৮ মার্চ ২০২২
swapnochash24.com | swapno chash